পতিসর রবীন্দ্র কাচারী বাড়িঃ
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত সংরক্ষিত পুরাকীর্তি, যা বাংলাদেশের উত্তরের জেলা নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় পতিসর গ্রামে নাগর নদীর তীরে অবস্থিত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ ও জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের দ্বারকানাথ ঠাকুর এ অঞ্চলের জমিদারি ১৮৩০ সালে কেনার পর ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার জন্য এ অঞ্চলে আসেন। পতিসরের কুঠিবাড়ি ও পদ্মাবোটে থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোরা ও ঘরে বাহিরে উপন্যাস, বিদায় অভিশাপ কাব্য এবং প্রতিহিংসা, ঠাকুরদা ও ভারতবাসী প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প রচনা করেন।
কাচারীর আশেপাশে ঠাকুরের পরিবারের একটি বিদ্যালয় (কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইন্সটিটিউশন), দাতব্য হাসপাতাল ও পুরাতন একটি কৃষি ব্যাংক যা ১৯০৫ সালে স্থাপিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ তার নোবেল পুরস্কারের এক লক্ষ টাকাও তিনি পতিসর কৃষিব্যাংকে দিয়েছিলেন। কৃষির উন্নতির জন্য তিনি পতিসরের মাঠে কলের লাঙ্গল চালিয়েছিলেন, গড়ে তুলেছিলেন কৃষি, তাঁত ও মৃৎশিল্পের সমবায় সংগঠন।
পতিসরের স্থাপনাগুলো দেখতে অনেকটাই শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের একই পরিবার কর্তৃক স্থাপিত স্থাপনাসমূহের মতোই। এখানে একটি দো-তলা কুঠিবাড়ি রয়েছে। এছাড়াও কুঠিবাড়ি ঘিরে বেশ কিছু ভবন রয়েছে যেগুলোর ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। কাচারী বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি পুকুর। পূর্বে পুকুরটি বেশ বড় থাকলেও কালক্রমে এটির মাটি ভরাট হয়ে গিয়েছে। মূল ভবনের সামনেই রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি আবক্ষ মূর্তি। এছাড়াও ভবনে প্রবেশের জন্য রয়েছে নান্দনিক একটি প্রবেশপথ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল প্রাপ্তির পর সর্বশেষ ১৯৩৭ সালে পতিসরে আসেন। এখনও রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়।
ঢাকা থেকে আত্রাই যাওয়ার জন্য ট্রেনই হলো উপযুক্ত বাহন। লালমনি, দ্রুতযান, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতাসহ রংপুর-দিনাজপুরগামী যেকোনো আন্তঃনগর ট্রেনে আত্রাই স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সিএনজি,ল অটোরিকশা, ভ্যানে সহজেই যাওয়া যায় পতিসরে। আবার ঢাকা থেকে নওগাঁয় সরাসরি বাসে গিয়ে সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ করেও যেতে পারেন পতিসরে। তবে মনে রাখতে হবে পতিসরে রাত্রিযাপনের জন্য কোনো হোটেল নেই, সরকারি একটি ডাকবাংলো রয়েছে। পূর্ব অনুমতি থাকলে এখানে রাত্রীযাপন করা যাবে। তা না হলে নওগাঁ শহরের যে কোনো আবাসিক হোটেলে থাকতে হবে আপনাকে।
চাইলে একদিনে ঘুরে আসা সম্ভব।